গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থান রাইগ্রামের। কিন্তু এই গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কোনোভাবেই কমছে না। তাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে মাদকের অভিশপ্ত থাবা।
তাই রাইগ্রামের নাম শুনলেই ভেঙে যায় বিয়ে। কারণ কেউ সন্তানদের এ গ্রামের কারোর সঙ্গে বিয়ে দিতে চান না। গ্রামের তরুণদের চাকরি পেতেও ভোগান্তির শেষ নেই।
রাইগ্রাম পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘হেরোইন পল্লী’ নামে। আর সাধারণ বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রামের মাদকের কুখ্যাতির কারণে।
মাদক নির্মূলে কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। রোববার বিকেলে রাইগ্রামের চারমাথা মোড়ের বটতলায় মাদকবিরোধী মতবিনিময় সভা হয়েছে। সেখানে নানান বিষয়ে কথা বলেন গ্রামবাসী। তারা তাদের ভোগান্তি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।
গ্রামের এসহাক আলীর (৫৫) জীবন চলে রিকশাভ্যান-ইজিবাইক মেরামত করে। চার ছেলে-মেয়ের বাবা তিনি। ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সম্প্রতি। তার দাবি, আগে বেশ কয়েকবার বিয়ে ভেঙে গেছে শুধুমাত্র গ্রামের নাম শুনে।
তার অভিযোগ, তুলনামূলক কম হলেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে অন্য সন্তানদের বিয়ের ক্ষেত্রেও। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের কেউ আত্মীয়তা করতে চান না।
এসহাক জানান, তার মেয়ে জামাই গার্মেন্টে চাকরি করেন, বাড়ি জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।
গ্রামের নামের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ইব্রাহিম মিয়াকেও (৩৮)। তিনি একজন গাড়ি চালক। সম্প্রতি চাকরির জন্য তিনি একটি কোম্পানিতে যান, যেখানে তার লাইসেন্সসহ যাবতীয় বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও যখন তার বাড়ি ঠিকানা জানতে পারে, তাকে আর চাকরি দেয় নি। কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, গাড়ি চালানো ফাঁকে তিনি মাদক পরিবহন করতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, কম-বেশি এমন নিয়মিত গ্রামের খ্যাতি পাওয়া এমন নামের কারণে তাদের নানান ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রামবাসী দ্রুত এমন সমস্যা থেকে মুক্তি চান। পাশাপাশি তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে সবাই এক হয়ে কাজ করতে চান।
২০১৮ সালের মে মাসে রাইগ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে মাদক সম্রাট রাজু মিয়া র্যাবের সাথে গুলিবিনিময়কালে নিহত হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযোগে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি আটক হন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment